মেডিক্যাল কলেজে ২০২০-২১ শিক্ষাবর্ষের ভর্তি পরীক্ষায় প্রথম হয়ে উচ্ছ্বসিত মিশরী মুনমুন। স্থির করে ফেলেছেন ভবিষ্যৎ লক্ষ্যও। পাবনার এই শিক্ষার্থী জানালেন, চিকিৎসক হয়ে সারা জীবন গরিব মানুষদের চিকিৎসা দেবেন তিনি।
মেডিক্যাল কলেজে ২০২০-২১ শিক্ষাবর্ষের ভর্তি পরীক্ষার ফলাফল প্রকাশ করে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর। এবার পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করেন ১ লাখ ১৬ হাজার ৮৫৬ জনের মধ্যে উত্তীর্ণ হয়েছেন ৪৮ হাজার ৯৭৫ জন।
এর মধ্যে প্রথম হয়েছেন মিশরী। পাবনা মেডিক্যাল কলেজে পরীক্ষায় অংশ নেয়া এই শিক্ষার্থীর প্রাপ্ত নম্বর ২৮৭.২৫। ভর্তি পরীক্ষায় ১০০ নম্বরের মধ্যে পেয়েছেন ৮৭.২৫। নির্বাচিত হয়েছেন ঢাকা মেডিক্যাল কলেজের জন্য।
ভর্তি পরীক্ষায় প্রথম হওয়ার পর প্রথম অনুভূতি ও ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা নিয়ে নিউজবাংলাকে সাক্ষাৎকার দিয়েছেন এই মেধাবী। জানালেন, বাবার ইচ্ছায় স্বপ্ন পূরণের দ্বারপ্রান্তে তিনি।
মিশরী বলেন, ‘একটি মানুষও যাতে বিনা চিকিৎসায় মারা না যায়। সুবিধাবঞ্চিতদের সুচিকিৎসা নিশ্চিতে আমি আজীবন কাজ করে যাব।
‘আমার বাবার স্বপ্ন ছিল, সেই স্বপ্ন পূরণের প্রথম দ্বারপ্রান্তে আমি। মেডিক্যাল ভর্তি পরীক্ষায় আমি প্রথম হয়েছি। এ আনন্দ ভাষায় প্রকাশ করার মতো নয়। এটা এক অন্য রকম অনুভূতি। এই অনুভূতির কথা ভাষায় প্রকাশ করা যায় না।’
পাবনা সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয় থেকে ২০১৮ সালে এসএসসি ও ২০২০ সালে পাবনা অ্যাডওয়ার্ড কলেজ থেকে এইচএসসি পাস করেন মিশরী। আগের পরীক্ষাগুলোর সাফল্যের ধারা ধরে রাখলেন মেডিক্যাল ভর্তি পরীক্ষায়ও।
মিশরী জানালেন, তার কখনও ঘণ্টা ধরে অনেক সময় পড়ালেখা করার অভ্যাস ছিল না। তার সাফল্যের মূলমন্ত্র ‘দিনের কাজ দিনে শেষ করা’।
‘আমি ঘণ্টা ধরে পড়ালেখা করতাম না। রাতও বেশি জাগতাম না। শিক্ষকরা যতটুকু পড়া দিতেন, দিনের যতটুকু পড়ার সেইটুকু দিনের মধ্যে শেষ করার চেষ্টা করতাম। অনেক সময় শেষ করা সম্ভব হতো না। তারপরও চেষ্টা করেছি সাধ্যমতো দিনের কাজ দিনে শেষ করার।’
মেডিক্যাল ভর্তি হতে চাওয়া অন্যদের জন্য পরামর্শ কী? মিশোরীর জবাব, ‘প্রথম পরামর্শ তারা মূল বই ভালোভাবে পড়বে। মূল বই ভালোভাবে পড়লে অনেক প্রশ্ন সলভ করা সম্ভব হবে। অনুশীলনী এবং বোর্ড কোশ্চেনগুলো ভালোভাবে সলভ করতে হবে। সঙ্গে আল্লাহর ওপর আস্থা রাখতে হবে।’
মিশরীর ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা গোছানো। জানালেন, সমাজ-দেশের জন্য কিছু করার আগে নিজেকে ভালোভাবে প্রস্তুত করতে চান। এরপর কাজ করতে চান তৃণমূল থেকে।
‘প্রথমে নিজ থেকে উন্নত করতে চাই, নিজের উন্নতি সম্ভব না হলে রাষ্ট্রসমাজ উন্নতি করা সম্ভব নয়। আমাকে নিজেকে আগে প্রস্তুত হতে হবে ভালো করে। তা না হলে দেশের জন্য কিছু করা সম্ভব হবে না।
‘আমি দেশের জন্য কিছু করতে চাই। সাধারণ মানুষের জন্য কিছু করতে চাই। যারা দরিদ্র, বঞ্চিত, অভাবগ্রস্ত তাদের সেবায় নিজেকে নিয়োজিত করতে চাই।’
মিশরীর বাবা আব্দুল করিম স্কয়ার ফার্মাসিউটিক্যালসে চাকরি করেন। মা মোসাম্মৎ মুসলিমা খাতুন একজন গৃহিণী। মেডিক্যাল ভর্তি পরীক্ষায় মেয়ের প্রথম হওয়ার খবরে উচ্ছ্বসিত তারা।
নিউজবাংলাকে করিম বলেন, ‘আল্লাহর কাছে লাখো কোটি শুকরিয়া, তিনি আমার মেয়েকে প্রথম হিসেবে বেছে নিয়েছেন মেডিক্যাল ভর্তি পরীক্ষায়। আমার স্বপ্ন ছিল আমার মেয়ে ডাক্তার হবে, তা বাস্তবে রূপ দেয়ার জন্য আমি যতটুকু পারি চেষ্টা করেছি। এ ছাড়া মেয়ের শিক্ষক সার্বক্ষণিকভাবে চেষ্টা করেছেন। সবার সহযোগিতায় আজ মেয়ে এই সাফল্য এনে দিয়েছে।
‘স্বপ্ন ছিল আমার মেয়ে বড় হয়ে ডাক্তার হবে, মেয়েকে আমি মেডিক্যালে পড়াব। সেই স্বপ্ন কিছুটা হলেও পূরণের দ্বারপ্রান্তে। এটা আমার অনেক ভালো লাগছে।’
আব্দুল করিমের সন্তানদের মধ্যে আগেই একজন ডাক্তার হয়েছেন। তার তিন মেয়ে। এর মধ্যে বড় মেয়ে ডাক্তার হয়ে বর্তমানে চুয়াডাঙ্গায় কর্মরত। অপরজন জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে অনার্সে পড়ছে। ডাক্তার হতে চলেছেন তৃতীয় মেয়ে মিশরী।
২০২০-২১ শিক্ষাবর্ষের মেডিক্যাল ভর্তি পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়েছেন মোট ৪৮ হাজার ৯৭৫ জন। পাসের হার ৩৯.৮৬ শতাংশ।
এর মধ্যে সরকারি মেডিক্যাল কলেজগুলোর জন্য নির্বাচিত হয়েছেন ৪ হাজার ৩৫০ জন। নির্বাচিতদের মধ্যে চলমান শিক্ষাবর্ষের রয়েছেন ৩ হাজার ৯৩৭ জন। আগের শিক্ষাবর্ষের ৪১৩ জন।
নির্বাচিতদের মধ্যে নারী শিক্ষার্থী বেশি, ২ হাজার ৩৪১ জন; পুরুষ ২ হাজার ৯ জন।